আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। প্রয়োজনে জনগণের মতামত নিতে এর আগে গণভোট আয়োজনের কথা বলেছে দলটি।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতির বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। দেড় ঘণ্টার এ বৈঠক শেষে যমুনার সামনে বিফ্রিংয়ে এসে তিনি পিআর পদ্ধতিতে (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে) নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন।
পিআর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন- এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনারা নোট রেখেছেন। উনারা বলেছেন চিন্তাভাবনা করবেন।’
দলটি বলছে, নির্বাচনের আগে হতে হবে বিচার ও সংস্কার। সংস্কার ও বিচার ছাড়া সুষ্ঠু সঠিক নির্বাচন হবে না, আবার পিআর পদ্ধতি ছাড়া শতভাগ জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না। আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে আয়োজনে প্রয়োজনে সরকারকে গণভোটের ডাক দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দলটি।
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, দেশ ও জাতি এই মুহূর্তে একটা ক্রান্তিলগ্নে। আমরা প্রথমে উপদেষ্টা মণ্ডলীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। বিশেষ করে আমরা দেশের ৫৩ বছরে যে রাজনৈতিক জঞ্জাল, গণতন্ত্র হত্যা, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার বিষয়টা ঐকমত্য কমিশনে জুলাই সনদের ভূমিকায় রাখা হয়েছে। স্বাধীনতার পর যে রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় ছিল তারা কেউই গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারেনি। জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, গত ৫৩ বছরের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ হয় নাই, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার হয় নাই, জনমতের শতভাগ প্রতিফলন ঘটেনি, যে ধারার জন্য এতো লড়াই, সংগ্রাম, সেই ধারায় যদি আবার আগামী নির্বাচন করেন তাহলে এটা আবারও লিখতে হবে আপনাদের ৫৩ বছর হয় নাই, আগামী ৫ বছরেও হবে না।
আশরাফ আলী আকন বলেন, গতানুগতির পদ্ধতিতে জাতির কোনো পরিবর্তন হবে না। ৩১টি দলের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনে ২৬টি দল পিআরের পক্ষে মত দিয়েছি। এই দলগুলোর পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলামেলা বলা হয়েছে, দেশের দুর্নীতি সন্ত্রাস, মাদক, মব, ভোট ডাকাতি, ভোট চুরি, বাক্স ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে হওয়া, এককভাবে নির্বাচন করা, ডামি প্রার্থী দেওয়া, এসবের বিপক্ষে প্রয়োজন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন।
পৃথিবীর ৯১টা দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, জনমতের প্রতিফলনের পদ্ধতি হচ্ছে পিআর। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, পিআর পদ্ধতি বিবেচনা করেন। যদি আগামী নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি দিতে না পারেন তাহলে একটা গণভোট দেন। জনগণই ঠিক করুক।
তিনি গণভোটের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইতোপূর্বে জনমতের প্রতিফলন জানতে গণভোট হয়েছে। জিয়াউর রহমান ও এরশাদকে জনগণ চায় কি চায় না সেজন্য গণভোট হয়েছে। ৫৩ বছরের জঞ্জাল নিরসন করার জন্য সারা দুনিয়ার তথ্য জরিপ করেই আমরা বলেছি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের কথা। পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের ব্যবস্থা করা কথাও অধিকাংশ দল বলেছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যরা আমাদের বলেছেন, তারা বিষয়টি বিচার বিবেচনা করবেন। আবারো বৈঠক হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দৃশ্যমান উপস্থিতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, কয়েকজন শিক্ষককে কান্নাকাটি করতেও দেখা গেছে। অথচ সেখানে আর্মি আসে নাই পুলিশ আসে নাই। এমনি করে সারাদেশে যে সন্ত্রাস চলছে, তা বন্ধ করতে পারে নাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৩০০ আসনে যখন নির্বাচন হবে তখন কিভাবে এই ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মব, সন্ত্রাস বন্ধ করবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরে এখনো আস্থা আসে নাই। এটা আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। এখনই তো কোনো দলকে প্রাধান্য দিয়ে তারা কথা বলছেন। ভোট কিন্তু পরিবর্তনশীল। প্রথম ভোট ছিল কিন্তু মুসলিম লীগে, এরপর সেটা কিন্তু বিভক্ত হয়ে গেছে যুক্তফ্রন্টে। এরপর পরিবর্তন হয়ে গেছে আওয়ামী লীগে, আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে, বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে। আবার আসছে বিএনপিতে, আওয়ামী লীগে। সুতরাং ভোট পরিবর্তনশীল। এটা বলার সুযোগ নাই অমুক দল ভালো দল, সেখানে অনেক ভোট আছে। সুতরাং এই চিন্তা করবেন না যে একটি দলকেই প্রাধান্য দেবেন।
আশরাফ আলী আকন জোর দিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে। তবে তার আগে হতে হবে বিচার ও সংস্কার। সংস্কার ও বিচার ছাড়া সুষ্ঠু সঠিক নির্বাচন হবে না, আবার পিআর পদ্ধতি ছাড়া শতভাগ জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করছে এমন সব দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চান উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ চায় না, এমন দুটি দল জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ চায় না। তারা কারা? সেটা জাতীয় পত্রিকায় আজকে উঠে এসেছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন যুগ্মমহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।